নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণ, বাহক ও চিকিৎসা

DR. MD. SHARIFUL ISLAM
0

 • নিপাহ ভাইরাস রোগ: 

নিপাহ একটি ভাইরাসজনিত (নিপাহ ভাইরাস) সংক্রামক রোগ। এরোগে মৃত্যুহার অনেক বেশী (৪০-৭৫%)। ১৯৯৮-৯৯ সালে নিপাহ ভাইরাস রোগের প্রথম


নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণ, বাহক ও চিকিৎসা


প্রাদুর্ভাব মালোয়েশিয়ার সুঙ্গাই নিপাহ নামক গ্রামে দেখা দেয়। এই গ্রামের নামেই ভাইরাসটির নামকরণ।মূলত ফল আহারী বাদুড়ই নিপাহ ভাইরাসের প্রধান বাহক, সব বাদুড়ই এই ভাইরাসের বাহক নয়। ফল আহারী বাদুড় নিজে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয় না। নিপাহ ভাইরাস রোগের কোন টিকা এবং সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, সতর্কতা ও সচেতনতাই এ রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায়।


• নিপাহ ভাইরাস রোগের লক্ষণ সমূহঃ

নিপাহ ভাইরাস রোগের লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে একরকম নাও হতে পারে, কখনও কখনও কোন

লক্ষণ নাও থাকতে পারে। সাধারণভাবে, খেঁজুরের কাঁচা রস পান করার বা বাদুড়ের আংশিক

আহার করা ফল খাওয়ার অথবা নিপাহ ভাইরাস রোগে আক্রান্ত পশু বা ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে

আসার ২ সপ্তাহের মধ্যে মৃদু থেকে তীব্র শ্বাসকষ্ট, জ্বর সহ মাথাব্যথা, মাংসপেশীতে ব্যথা, খিঁচুনি,

প্রলাপ বকা, অজ্ঞান হওয়ার মতন লক্ষণ থাকলে নিপাহ ভাইরাস রোগ বলে সন্দেহ করা যেতে

পারে।

■ কিভাবে ছড়ায়?

বাদুড়ের পান করা খেঁজুরের কাঁচা রসে বা আংশিক আহার করা ফলে বাদুড়ের লালা বা মল-মূত্র মিশে থাকে।


বাদুড়ের আংশিক আহার করা সেই ফল জমিতে পড়ে থাকে অথবা বাদুড়ের মল-মূত্রও ঘাসের সাথে মিশে থাকে।

বাদুড়ের পান করা খেঁজুরের কাঁচা রস পান করলে বা আংশিক আহার করা বা কামড়ানো

ফল খেলে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে। কারণ বাদুড়ের লালা/মল/মূত্র পান করা খেঁজুরের কাঁচা রসে ও আংশিক আহার করা ফলে লেগে থাকে।

বাদুড়ের আংশিক আহার করা ফল অথবা ঘাস গরু, ছাগল, শূকর খেলে তাদের শরীরে

নিপাহ ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত সেই পশুর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসলে মানুষের শরীরে নিপাহ ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।

বাদুড়ের লালা, মল-মূত্র মিশ্রিত খেঁজুরের কাঁচা রস পানে বাংলাদেশের কোন কোন জেলায়

মানুষ নিপাহ আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে কোন কোন অঞ্চলে নিপাহ সংক্রমিত রোগীর

ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি নিপাহ আক্রান্ত হয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সংক্রমিত রোগীর

হাঁচি-কাশি-কফ-থুথু অর্থাৎ শ্বাসতন্ত্র ও শরীরের সংক্রমিত নিঃস্বরণের মাধ্যমে নিপাহ একজন থেকে অন্যজনে সংক্রমিত হতে পারে।

■ আতংক নয়, দরকার সতর্কর্তা ও সচেতনতা

যেকোন ফল খেতে হলে তা ভাল করে ধুয়ে শুকনো অবস্থায় খেতে হবে। কাঁচা শাক-সব্জি দিয়ে সালাদ খেতে হলে সেগুলোও ভাল করে ধুয়ে ও পরিষ্কার করে নিতে হবে।

খেঁজুরের কাঁচা রস কোন ভাবেই পান করা যাবে না।

• সর্ব অবস্থায় বাদুড়ের লালা, মল, মূত্র এড়িয়ে চলতে হবে।

• খেঁজুরের গুড়, রান্না করা খেঁজুরের রসের পায়েস, রান্না করা শাক-সব্জী নিরাপদ। ৭০°সে. বা তার

বেশী তাপে নিপা ভাইরাস নষ্ট হয়।

• নিপাহ আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে বিনা প্রয়োজনে কেউ যাবেন না। রোগীসেবার জন্য সঠিক সাবধানতা ও

সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করে কাউকে নির্দিষ্ট করুন। শ্বাসতন্ত্র বাহিত রোগ প্রতিরোধে যে

সব নিয়ম-কানুন রয়েছে সেবাকারী ব্যক্তি সে সব নিয়ম মেনে চলবেন। সেগুলো হচ্ছেঃ

যখন রোগীর এক মিটারের মধ্যে যাবেন, তখন আগে নিজে মুখে মাস্ক পড়ুন, তারপর রোগীর

মুখে মাস্ক পরিয়ে দিন।

রোগীকে খাবার ও ঔষধ খাওয়াবার আগে ও পরে সাবান দিয়ে দু'হাত ভাল করে ধুয়ে নিন।

রোগীর খাওয়ার আগে ও পরে থালা-বাসন সাবান দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নেবেন।

রোগীর আংশিক খাওয়া/ উদ্বৃত্ত খাবার অন্য কাউকে খেতে দেবেন না, কোন প্রাণীকেও

খাওয়াবেন না। খাবার এমন জায়গাতে ও এমন ভাবে ফেলে দেবেন, যেন সেখান থেকে অন্য

কোন মানুষ বা প্রাণী সেটা আর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে।

রোগীর ব্যবহারের কাপড়/ তোয়ালে/ থালাবাসন/ গ্লাস ইত্যাদি সাবান দিয়ে ভাল করে ধুয়ে আলাদা রাখুন, অন্য কেউ তা ব্যবহার করবেন না।

রোগীর মৃত্যু হলে তার দাফন-কাফন নির্দেশিত নিয়ম মেনে করবেন, যেন মৃত রোগীর লালা/ রক্ত/ মল/ মূত্রের সরাসরি সংস্পর্শে অন্য কেউ না আসে। গ্লাভস ও মাস্ক পরে নিদের্শিত

ব্যবস্থা গ্রহণ করে মৃতদেহ গোসল করাতে হবে। যিনি/ যারা গোসল করাবেন, তিনি/ তারা মৃতদেহ গোসল করাবার পরে নিজে/ রা সাবান দিয়ে গোসল করে ধোয়া কাপড় পরবেন।

• নিপাহ ভাইরাস রোগের লক্ষণ বা লক্ষণগুলো দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অতিসত্বর নিকটস্থ

সরকারী হাসপাতালে প্রেরণ করুন।


তথ্য সংগ্রহ আইইডিসিআর থেকে 

Tags

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
margin-top: 16px; } input[type=submit] { background-color: #04AA6D; color: white; border: none; } input[type=submit]:hover { opacity: 0.8; }

CSS Newsletter

Subscribe to our Newsletter

   

for daily update,new post